গাংনীতে বন্যা’র লাশ দাফন। সুদকারবারী হাতেম ধরাছোয়ার বাইরে

কর্তৃক farukgangni

ফারুক আহমেদ :

মেহেরপুরের গাংনীর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের জুবাইদা আরফিন বন্যা’র দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় তেঁতুলবাড়িয়া মোল্লাপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। বিষপান করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। জুবাইদা আরফিন বন্যা তেঁতুলবাড়িয়া হাজীপাড়ার প্রবাসী এরশাদ আলীর স্ত্রী ও মোল্লাপাড়ার মহাব্বত আলীর মেয়ে।
স্থানীয়রা জানায়, জুবাইদা আরফিন বন্যা’র স্বামী এরশাদ আলীকে বিদেশে পাঠানোর সময় তেঁতুলবাড়িয়া হাজীপাড়া হারেজ শাহের ছেলে হাতেম আলী সুদের উপর কিছু টাকা দিয়েছিলো। টাকা লেনদেনের সূত্র ধরে হাতেম আলী জুবাইদা আরফিন বন্যা’র বাড়িতে যাতায়াত করে। যাতাযাতের সূত্র ধরে জুবাইদা আরফিন বন্যা ও হাতেম আলীর অনৈতিকতার বিষয় নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। জুবাইদা আরফিন বন্যাকে তার শশুর বাড়ির লোকজন বলে হাতেম আলী যেন বাড়িতে না আসে। এ কথা নিয়ে জুবাইদা আরফিন বন্যা ও তার শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিমান করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকালে বিষপান করে। বিষপানের বিষয়টি জানতে পেরে শশুরবাড়ির লোকজন চিকিৎসার জন্য সন্ধানী হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার আরো অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টায় তার মৃত্যু হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতালন কর্তৃপক্ষ। একই দিন রাত ৮ টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,হাতেম আলীর সাথে জুবাইদা আরফিন বন্যা’র পরোকিয়া সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রতিবেশিরা জুবাইদা আরফিন বন্যা’র শশুর পক্ষের লোকজনকে জানায়। জুবাইদা আরফিন বন্যা’র শশুর বাড়ির লোকজন সে সম্পর্কে বাধা দেওয়ার কারনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। কিংবা হাতেম আলী বিষপান করতে প্ররোচনা করতে পারে বলে ধারনা জুবাইদা আরফিন বন্যা’র শশুর বাড়ির লোকজনের। মেহেরপুর আদালতের একজন আইনজীবি বলেন, জুবাইদা আরফিন বন্যা’র শশুর কিংবা বাবার বা তাদের পক্ষ থেকে যে কেউ হাতেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। মামলা হলে আইনগত সহায়তা দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে জুবাইদা আরফিন বন্যা’র বাবা ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কে এই হাতেম আলী ? হাতেম আলী তেঁতুলবাড়িয়া হাজীপাড়া হারেজ শাহের ছেলে। সে এলাকায় লম্পট ও সুদকারবারী হিসেবেই পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সুদকারবারী ও নারী কেলেংকারি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। হাতেম আলী বর্তমানে দুজন স্ত্রী রয়েছে। দুজন স্ত্রী পাশাপাশি ঘর করে বসবাস করে। নারী কেলেংকারির ঘটনায় দুজন স্ত্রীর সাথে প্রায় সময় হাতেম আলী পারিবারিক কোলহ তৈরি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতেম আলীর স্ত্রীর নিকট এক আতœীয় বলেন,নারী কেলেংকারির প্রতিবাদ করতে গেলে হাতেম আলী তার স্ত্রীদের মারধর করে। মরধরের ভয়ে আর প্রতিবাদ না করে মুখ বুঝে সব সহ্য করতে হয় তাদের।
হাতেম আলীর যত অপকর্ম : সুদকারবারী হাতেম আলীর কারনেই খামহল গ্রামের হাসেম আলীর স্ত্রী আকলিমা খাতুন আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। এছাড়া খাসমহল গ্রামের শাকিলা খাতুন নামের এক গৃহবধূকে নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে হাতেম আলীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি শাকিলার স্বামীর পরিবারের সাথে হাতেম আলীর বিরোধ মারধর পর্যন্ত গড়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,হাতেম আলী এলাকার যারা প্রবাসী যাবে বা যাদের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী বা মেয়ে রয়েছে তাদেরকে সুদের উপর টাকা দেয়। সুদের টাকা লেনদেন করতে গিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। হাতেম আলীর সুদকারবারীতে অনেকেই নিঃশ হয়েছেন। অনেকেই আবার কয়েক গুন টাকা বেশি দেওয়ার পর তার ক্যাডারদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছে।
সুদকারবারী হাতেম আলীর বিরুদ্ধে গাংনী থানায় অভিযোগ : হাতেম আলীর নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারনে তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ফেরদৌসি বেগমকে মারধরের হুমকি দেয় হাতেম আলী সহ তার সহযোগিরা। হুমুকি ধুমকি দেওয়ার প্রতিকার পেতে সুদকারবারী হাতেম আলী সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ফেরদৌসি বেগম। অভিযোগটি এ এস আই মোহাম্মদ আলীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান।
এ এস আই মোহাম্মদ আলী বলেন,চলতি মাসের ৯ তারিখে হাতেম আলী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে ইউপি সদস্য ফেরদৌসি বেগম। ঘটনা তদন্ত করতে বাদী ও বিবাদীগণকে চলতি মাসের ১৫ সেপ্টেম্বর গাংনী থানায় আসতে বলা হয়। কিন্তু বিবাদীরা ধার্য তারিখ পরিবর্তন করে পরবর্তী দিন ধার্য করতে মৌখিক ভাবে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আবার যে কোন সময় উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হবে।
এসব অপকর্মের বিষয়ে সুদকারবারী হাতেম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমি ভালো মানুষ আমার বিরুদ্ধে সবাই ষড়যন্ত্র করে। এসময় হাতেম আলী সংবাদ প্রচার না করতে তিনি অনুরোধ করেন।
গাংনী থানার ওসি মো: ওবাইদুর রহমান বলেন,হাতেম আলীর বিরুদ্ধে সুদকারবারী সহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন

shares
error: Content is protected !!