অসহায়ের পাশে দাঁড়ালো প্রবাস ফেরত সাইফুল ইসলাম

কর্তৃক farukgangni

 গাংনী নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :

৩০ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছি।বছর দুয়েক হলো হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় আর ভ্যান চালাতে পারিনা।পরিবারের সাতজন সদস্য।আমার এক ছেলে দুই মেয়ে।ছেলের বিয়ে দেয়ার পর তার পাঁচ ছেলেমেয়ে।ছয় মাস হল আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।সংসারে শুরু হয় অভাবনীয় কষ্ট।আমারও বয়স হয়েছে (৭৫)।পিতার আগে সন্তানের মৃত্যু যে কত কষ্টের তা বলে বোঝানো কখনোই সম্ভব নয়।
পরিবারের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য সয়েছি অসহনীয় কষ্ট।কারণ একদিন আয় না হলে পরিবারের মুখে ভাত উঠবে না।আবার অন্যদিকে নাতি নাতনির লেখাপড়ার খরচ।তাই প্রতিদন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা আয় হয় সেই টাকা দিয়েই চলে পরিবার।নিজের সম্পত্তিও নাই।এক সময় অন্যের জমিতে কাজ করতাম।তারপর হাতে তুলে নিয়েছিলাম ভ্যান।দুই বছর হলো হাত ভেঙ্গে গেছে এ কারণে ভ্যান চালাতে পারি না।তাই বাধ্য হয়ে একটা ছোট্ট দোকান দিয়েছি কোনরকম যাতে সংসার আর নাতি নাতনির লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি।টাকার অভাবে দোকানে তেমন কোন মালপত্র তুলতে পারিনি।অনেকে দেখেছে কেউ সহায়তা করেনি।তবে আমার ছেলের বয়সী এক প্রবাসী এসে আমার কষ্ট দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে।মালপত্র দিয়ে দোকান ভর্তি করে দিয়েছে।আমার দোকান ঘর এখন মানিয়ে গেছে।আশা করছি আল্লাহর রহমতে এখান থেকে আমার সংসার ভালো রকম চলে যাবে এবং তাদের লেখাপড়ার খরচও হয়ে যাবে।আনন্দে যেন তাঁর দুচোখ বেয়ে জ্বল চলে এলো।সৃষ্টিকর্তার লীলা খেলা বড় দায়।আল্লাহ এই সন্তানটিকে হয়তো আমাকে সাহায্য করার জন্য পাঠিয়েছে।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে এমনটাই বলছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের মোঃ রিয়াজুল ইসলাম।

দেবীপুর গ্রামের প্রবাসী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন,অসহায় মানুষ দেখলে খুব কষ্ট লাগে।সত্যিকার কোনো সন্তানের এই কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক।বাবা খুব কষ্ট করে সন্তান লালন পালন করে।সত্যিকারের সন্তান কখনো বাবাকে কষ্ট দেয় না।আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বিদেশ পাঠিয়েছিল।আমি আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি।তাই অসহায় লোকটিকে দেখে আমার খুব কষ্ট লাগছিল। তাই নিজের পক্ষ থেকে একটা রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।আমি দোকানটা সাজিয়ে দিয়েছি এখান থেকে যেন সে সংসার ও সন্তানের লেখাপড়া খরচ সুন্দরভাবে চালাতে পারে।ইনশাল্লাহ যতটুকু পারি মানুষকে সহযোগিতা করব আল্লাহ যেন আমাকে সেই তৌফিক দান করেন।

আবু কায়সার স্বপন বলেন,আমরা যুব সমাজ সব সময় অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।আমরা একইভাবে কিছুদিন আগেও এক অসহায় পরিবারের হাতে একটি ভ্যান তুলে দিয়েছি।আজকে প্রবাস ফেরত সাইফুল ইসলাম এক অসহায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে।প্রবাস ফেরত সাইফুল ইসলামকে অসংখ্য ধন্যবাদ সব সময় মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য।

দেবীপুর বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন,মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে।কিছু মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের হৃদয়ে।প্রবাসী সাইফুল ইসলাম আমাদের বিভিন্ন মানুষকে সহযোগিতা করে সকলের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।আজ রোববার বিকেলে মোঃ রিয়াজুল ইসলামের দোকান সাজিয়ে দিয়েছে দেবীপুর ভিটাপাড়ার প্রবাস ফেরত সাইফুল ইসলাম।

দেবীপুর গ্রামের ইউপি সদস্য হীরোক আলী বলেন,সাইফুল ইসলাম একজন প্রবাসী।অনেককে সাহায্য সহযোগিতা করেছে।আমরা যখনই কারো জন্য সহযোগিতা চাই কখনো না করে না।আজকেও একজন অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।মোঃ রিয়াজুল ইসলামের রোজগারের জন্য একটি ছোট্ট দোকানকে সাজিয়ে দিয়েছে।প্রত্যেকের উচিত এই অসহায় মানুষগুলোর দিকে তাকানো।যাতে এই অসহায় মানুষগুলো একটু সুখের ছোঁয়ায় বসবাস করতে পার। পরিবারের মুখে তুলে দিতে পারে এক মুঠো ভাত।প্রবাসী মাহমুদ সাইফুল ইসলামকে অসংখ্য ধন্যবাদ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।আর আমার পক্ষ থেকে যতটুক পারি তাঁকে সহযোগিতা করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন

shares
error: Content is protected !!